What is AUKUS - যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া গঠন করে নতুন একটি জোট


What is AUKUS - যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া গঠন করে নতুন একটি জোট



AUKUS: এই জোটে কেন ভারতকে বাদ দেওয়া হয়েছে? চীন কিভাবে রেসপন্স করেছে? এটা কেন দক্ষিণ এশিয়ার জন্য খুবই ভয়ংকর হবে?



গতকাল ভারতকে বাদ দিয়ে AUKUS বা অকাস নামে নতুন একটি জোট গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া। পরমাণু সাবমেরিনকে কেন্দ্র করে গঠিত হওয়া এই নতুন জোট দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জন্য খুবই ভয়ংকর একটা বার্তা দিচ্ছে। তাই আজকে এটা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া এই তিনটা দেশকে টার্ম হিসেবে একসাথে বলা হয়- "Three English-speaking maritime democracies"। এই তিনটা দেশের অবস্থান পৃথিবীর তিন প্রান্তে হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে তিনটা মিল রয়েছে। প্রথমত, তিনটা দেশই ইংলিশ স্পিকিং কান্ট্রি। দ্বিতীয়ত, এই তিনটা দশের উভয় পাশেই সমুদ্র রয়েছে। অর্থাৎ তিনটা দেশেরই সমুদ্রের সাথে সীমানা রয়েছে। তৃতীয়ত, এই তিনটা দেশই লিবারেল গনতান্ত্রিক দেশ। আইডিওলজিক্যাল মিল থাকায় এই তিনটা দেশ বিগত ৭০ বছর ধরে একে অপরের বন্ধু। শুধু বন্ধুই না বরং পরিক্ষিত এবং বিশ্বস্ত বন্ধু(Like Minded Countries)।


"Animal Spirit" নামে একটা টার্ম রয়েছে। যদিও এউ টার্মটা ইকোনমিতে প্রচুর ব্যবহার হয় কিন্তু ইদানীং অস্ট্রেলিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই টার্মটা ব্যবহার হচ্ছে। বিগত ছয় বছর (২০১৪-২০২০) বিশ্ব রাজনীতিতে অস্ট্রেলিয়া অনেকটা নিরব ভূমিকা পালন করেছিলো। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুগুলাতে অস্ট্রেলিয়া নিজেকে যতসম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে অস্ট্রেলিয়া ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে খুবই একটিভ হয়ে উঠে। সাধারণত কেউ হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লে আমরা তাকে গুতা (Shove) দিয়ে জাগিয়ে দেই। যখন কারো ব্যবসা মূলধনের অভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তখন তাকে স্বল্প সুদে কিছু ঋণ বা Bell Out দিয়ে পুনরায় তার ব্যবসা সক্রিয় করে তুলতে সহযোগীতা করা হয়। এই যে কাউকে গুতা দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা কিংবা ব্যবসা পুনরায় সক্রিয় করে তুলার জন্য কিছু ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করা এটাকে বলা হয় Animal Spirit। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ঘুমিয়ে পরা সেই অস্ট্রেলিয়াকে জাগিয়ে তুলেন জো বাইডেন। গত মার্চ মাসে জো বাইডেন অস্ট্রেলিয়াকে কিছু আশ্বাস দেওয়ার মাধ্যমে পুনরায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সক্রিয় করে তুলেন। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্ব রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠতে গুতা বা Animal Spirit টা দিয়েছেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র কতৃক অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এই এ্যানিমেল স্পিরিটটা হচ্ছে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। এবার এটার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছি।


★Trilateral Security Pact★
গতকাল বুধবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এই তিন নেতা মিলে নতুন একটা জোট গঠন করেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে Trilateral Security Pact বা তিন দেশীয় নিরাপত্তা চুক্তি। নতুন ঘটিত হওয়া তিন দেশের এই জোটকে সংক্ষেপ বলা হয় AUKUS বা অকাস(A= Australia, UK= United Kingdom, US= United States)।
এখন প্রশ্ন হতে পারে এই জোটের মূল উদ্দেশ্য কি? আমি আজকে সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে তিনজনের Joint Statement টা পড়লাম। সেখানে লেখা এই জোটের উদ্দেশ্য তিনটা।
এক- ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চল অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিকে স্থিতিশীল (Stable) রাখা।
দুই- ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি (Peace) প্রতিষ্ঠা করা।
তিন- চুক্তির আওতায় তারা নিজেদের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি পরস্পরকে বিনিময় করবে।
ভাবা যায়? দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে রাজনৈতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া! এই অঞ্চলে এমন কি অশান্তি বিরাজ করছে যে যুক্তরাষ্ট্র কতৃক এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে?
গত দুই দশক ধরে এরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে ল্যাটিন আমেরিকাতে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে আফ*গানি*স্তানে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে সিরিয়া-ইয়ামেন-লিবিয়াতে। এখন শান্তি প্রতিষ্ঠা করার বাকি আছে শুধু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে! তাই এই অঞ্চলে নাকি এরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে এবং এই অঞ্চলটাকে রাজনৈতিক ভাবে স্থিতিশীল রাখবে। বুঝতে পারছেন কি রকম শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে এই অঞ্চলে? আমি অনুরোধ করবো এই পোস্টটা সম্পূর্ণ পড়ার পর আমার টাইমলাইনের ৭১ নাম্বার পোস্টটা পড়ার জন্য।
দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে এটা তো জাস্ট Joint Statement এ লেখা। এবার আসি মূল উদ্দেশ্য নিয়ে। যেহেতু এই জোটে তিনটা দেশ অন্তর্ভুক্ত তাই তিনটা দেশের উদ্দেশ্য গুলা আলাদাভাবে বলছি।


★যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য★
AUKUS বা অকাস গঠন করার পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য: আজকে সকালে জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং এ ককাস নিয়ে সাত মিনিটের একটা বক্তব্য দেন। সেখানে যে বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে তা হলো;
এক- দক্ষিণ চীন সাগর ও ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কমিয়ে আনা।
দুই- দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্যিক জাহাজগুলোকে নিরাপদ রাখা।
তিন- অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাবহার করে চীনের উপর প্রভাব বিস্তার করা। ঠিক সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মিলে অস্ট্রেলিয়াকে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন দিবে। অকাস (Aukus) নামের এই চুক্তির আওতায় থাকবে Artificial Intelligence, কোয়ান্টাম টেকনোলজি ও সাইবারের মতো বিষয়গুলো। অনেক দূরত্বে বসে এই সাবমেরিনগুলোকে পরিচালনা করা যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সাগরতলে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।


★অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্য★
AUKUS বা অকাস গঠন করার পিছনে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্য কি? অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের বক্তব্য শুনে আমি দুইটা বিষয় পেয়েছি।
এক- Security: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া নিউক্লিয়ার সাবমেরিন পাবে। এবং এই তিন দেশের অংশিদারিত্বের ফলে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরিতে সক্ষম হতে যাচ্ছে। দুই- Prosperity: অস্ট্রেলিয়ার চারদিকেই সমুদ্র। তাই দেশটির নিরাপত্তা মূলত নির্ভর করে নৌ বাহিনীর উপর। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর পরমাণু শক্তি চালিত কোন সাবমেরিন নেই। এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। এই পারমানবিক সাবমেরিনের কারনে অস্ট্রেলিয়া তার মেরিটাইম বাউন্ডারির নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি সামুদ্রিক সম্পদের উপর নিজেদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার জনগন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের প্রশংসা করেছেন।


★যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্য★
AUKUS বা অকাস গঠন করার পিছনে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্য: অকাস নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এখন পর্যন্ত কোন বক্তব্য দেননি কিন্তু চুক্তিটির বিষয়ে আজকে দুপুরে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে একটা পোস্ট দিয়েছেন। বরিস জনসনের মতে Trilateral Security Pact বা তিন দেশীয় নিরাপত্তা চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় একসাথে কাজ করতে পারবে। বরিস জনসন তার পোস্টে এটাও উল্লেখ করেছেন এই চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্যে জব বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এই চুক্তির ফলে কিভাবে জব বৃদ্ধি পাবে সেটা আমি ক্লিয়ার না। তবে বরিস জনসন নতুন এই চুক্তির ফলে অনেক সমালোচনার স্বীকার হয়েছেন। বিশেষ করে Labour Party থেকে। তারা বলছে যে, দক্ষিণ চীন সাগর এবং ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার কোন সম্পর্ক নাই। দ্বিতীয়ত নিউক্লিয়ার সাবমেরিন অত্যন্ত ব্যায়বহুল। তাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সাবমেরিন উপহার দেওয়ার কোন যুক্তি নেই। জনগনের ট্যাক্সের টাকা যুক্তরাজ্যের উন্নয়নে ব্যায় করা উচিত।


★ফ্রান্স কেন ক্ষুব্ধ?★
নতুন এই চুক্তির ফলে ফ্রান্স কেন ক্ষুব্ধ হয়েছে? ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এই চুক্তিকে "Regrettable" বা অনুশোচনীয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তার কারন দুইটা। এক- এই চুক্তিতে ফ্রান্সকে সাথে রাখা হয়নি। দুই- ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ফ্রান্সের একটা চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীকে ৫০ বিলিয়ন ডলারে ১২টি সাবমেরিন সরবরাহের কাজটি পেয়েছিলো ফ্রান্স। এবং অস্ট্রেলিয়াতে ফ্রান্স নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি তৈরি করার একটা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা নিয়ে কথা হয়েছিলো। কিন্তু এখন AUKUS বা অকাসের কারনে ফ্রান্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফ্রান্সের পরিবর্তে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য লাভবান হবে।


★নিউজিল্যান্ডের প্রতিক্রিয়া কি?★
AUKUS নিয়ে নিউজিল্যান্ডের প্রতিক্রিয়া কি? নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া এই দুটি দেশ প্রায় কাছাকাছি যায়গায় অবস্থিত।
চুক্তি প্রকাশিত হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নিউজিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জেসিন্ডা অর্ডান বলেছেন নিউজিল্যান্ডের সীমান্তে অস্ট্রেলিয়ার নিউক্লিয়ার সাবমেরিন প্রবেশ করা কিংবা মহরা দেওয়া ইত্যাদী নিউজিল্যান্ড সর্মথন করবে না। নিউজিল্যান্ডের মেরিটাইম বর্ডারে এসব সাবমেরিন প্রবেশ করতে পারবে না। নিউজিল্যান্ডের জনগনও এতে সমর্থন দিয়েছেন। এর পিছনে দুইটা কারন রয়েছে।
প্রথমত, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিউজিল্যান্ড হচ্ছে একটা নিরপেক্ষ রাষ্ট্র( Neutral State)। বিতর্কিত কোন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তারা নিজেদেরকে জড়ানো পছন্দ করে না। দ্বিতীয়ত, প্রভোকেইটিভ কোনো ইস্যুতে জোগ দিয়ে অন্য আরেকটা রাষ্ট্রের সাথে নিজেদের সম্পর্ক খারাপ করতে নিউজিল্যান্ড আগ্রহী নয়৷ তাছাড়াও চীনের সাথে নিউজিল্যান্ডের বানিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।


★ভারতকে কেন এই জোটে অন্তভূক্ত করা হয়নি?★
একটা বড়ো প্রশ্ন হলো ভারতকে কেন এই জোটে অন্তভূক্ত করা হয়নি? ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করেই এই জোট। অথচ এই অঞ্চলের প্রধান শক্তি ভারতকেই জোটে নেওয়া হয়নি? এমনকি কোয়াডে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করা সত্বেও AUKUS এ ভারতকে না রাখায় কিছুটা মন খারাপ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন ভারতকে রাখা হয়নি? আমার কাছে দুইটা কারন মনে হয়েছে। প্রথমত, এই চুক্তির মধ্যে জড়িয়ে আছে নিরাপত্তা বা Security এর মতো একটা সেনসেটিভ ইস্যু। এবং এই সিকিউরিটি রক্ষা করবে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন এর মাধ্যমে। এই পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিনগুলা গোপনে এবং নিরাপদ দূরত্বে বসে চীনের বিরুদ্ধে পরিচালনা করা হবে। তাই এই ধরনের চুক্তিগুলা মূলত করতে হয় অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও পরিক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্রের সাথেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া যতটা বিশ্বস্ত ভারত কিন্তু ততটা বিশ্বস্ত নয়। যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে। আর ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক বিগত একদশক ধরে। দ্বিতীয়ত, এই চুক্তিতে ভারতকে না রাখার কারনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ভারতের নিজ প্রয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন ভারতের। এই অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পাকিস্তানকে ব্যবহার করেছিলো, ঠিক তেমনিভাবে চীনকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতকে ব্যবহার করছে।


★★চীনের প্রতিক্রিয়া কি? ★★
চীনের প্রতিক্রিয়াটা একটু পরেই বলছি। দেং জিয়াও পিং এর শাসনামল অর্থাউ ১৯৮০ সাল থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনের ডিপ্লোম্যাসি যেরকম ছিলো এখন কিন্তু সেরকম নেই৷ চীনের Diplomacy তে একটা বড়ো Shift এসেছে। চীনের পূর্বের ডিপ্লোম্যাসিটা এরকম ছিলো-
চীনের বিরুদ্ধে সংঘটিত হওয়া যেকোনো ইস্যুকে প্রথমে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা
(observe calmly),
সেই ইস্যুর উপর নিজেদের পজিশন ঠিক করা(secure our position),
সেই বিষয়টির সাথে খাপ খাইয়ে আরো ভালোভাবে বিষয়টিকে জানা(cope with affairs calmly),
তারপর নিজেদের শক্তিমত্তা অন্যদের কাছে প্রকাশ্যে প্রকাশ না করা এবং ধৈর্য ধরা(hide our capacities and bide our time),
এমন পজিশন নেওয়া যেন অন্যরা বুঝতে না পারে আমরা আসলে কি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি(
be good at maintaining a low profile)
তারপর বুঝেশুনে সেই ইস্যুর ব্যপারে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া( finally take decision)।।
এই আন্তর্জাতিক কোন বিষয়কে পর্যবেক্ষন করা, দীর্ঘ সময় নিয়ে বিষয়টি ভাবা তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া এটা ছিলো চায়নার অতীতের পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু চীন বর্তমানে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অতো বেশি সময় নেয়না। কেউ চীনের বিরুদ্ধে বললে চীন সেটা সাথে সাথে রেসপন্স করে। কাল বিলম্ব না করে সেটার জবাব দেয়। আর এটাকেই বলা হচ্ছে চীনের Wolf Warrior Diplomacy বা Combating Diplomacy। এটা নিয়েও আমার আরেকটা বিস্তারিত পোস্ট আছে। কমেন্ট এ লিংক দিয়ে দিবো। নতুন জোট AUKUS সম্পর্কে চীন কালবিলম্ব না করেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। প্রথমত চীন বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্র কতৃক AUKUS নামের নতুন এই চুক্তিটি হচ্ছে "Provocative", যা যুদ্ধকে উসকে দেয়। দ্বিতীয়ত, চীন এটাকে আখ্যায়িত করেছেন "The Cold War Mentality" হিসেবে। চীনের মতে যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করেই এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং স্নায়ু-যুদ্বের একটা পরিবেশ তৈরি করছে।

From Facebook 
Muhammad Miraj Mia
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form